চার বন্ধু সারারাত পার্টি করেছে। খুব মজা হয়েছে। এতো মজা হয়েছে যে, পরদিন সকালে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা সেটা কারো মনেই ছিলনা। পরীক্ষার হাত থেকে বাঁচতে চারজন একটা গল্প বানাল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঘণ্টা খানেক আগেই তারা ডিন স্যারের অফিসে হাজির। তাদের চারজনের হাত-মুখ গ্রিজ আর কালিতে ভরা। ডিন স্যার চারজনকে এ অবস্থায় দেখে একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের এমন অবস্থা কীভাবে হল? আর পরীক্ষার হলে না গিয়ে এখানে এসেছ কেন?’ চারজনের মধ্যে একজন একটু নেতা টাইপের ছিল। সে বলল, ‘স্যার আমরা একটা বিয়েতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে আমাদের গাড়ির একটা চাকা পাঙ্কচার হয়ে যায়। অনেক রাত তাই আশেপাশে কোন মেকানিক পায়নি আমরা। পুরোটা পথ গাড়ি ধাক্কা দিয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে।” সব শুনে ডিন বললেন, “ঠিক আছে। আমি তোমাদের দুইদিন সময় দিলাম। তোমরা একটু প্রস্তুতি নিতে পারো এ সময়ে। তৃতীয় দিন তোমাদের পরীক্ষা নিব।”
চারজনেই খুব খুশি। মেঘ না চাইতেই যেন বৃষ্টি। পড়ার জন্য সময় পাওয়া গেল। সবচেয়ে বড় কথা, ডিন স্যার তাদের চালাকি ধরতে পারেননি। পরীক্ষার দিন তারা চারজন ডিনের অফিসে হাজির হল। ডিন স্যার বললেন, “যেহেতু এটা একটা বিশেষ পরীক্ষা তাই একটু অন্যভাবে হবে। তোমাদের চারজনকে চারটি আলাদা আলাদা রুমে বসে পরীক্ষা দিতে হবে।” ভিন্ন ভিন্ন রুমে পরীক্ষা দিতে তাদের কোন আপত্তি ছিলনা। কারণ তারা ইতোমধ্যে যথেষ্ট প্রস্তুত। পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখা গেল ১০০ নম্বরের পরীক্ষা কিন্তু প্রশ্ন মাত্র দুটি। প্রশ্নপত্রটি ছিল এরকমঃ
১) তোমার নাম————— (১ নম্বর)
২) গাড়ির কোন চাকা পাঙ্কচার হয়েছিল———— (৯৯ নম্বর)
ক) সামনের বাম চাকা খ) সামনের ডান চাকা গ) পেছনের বাম চাকা ঘ) পেছনের ডান চাকা।
শুধু পরীক্ষা নয়, মিথ্যা কথা বা মিথ্যা গল্প আপনাকে কখনও বাঁচাতে পারবেনা। কারণ সত্য আর গল্প পাশাপাশি চলে। যে গল্প মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে সেটি আসলে বেশিদিন টেকেনা। মানুষ এসব গল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। Storywallahs -এর Founder আমীন হক বলেন, ‘Truth Well Told is Story’ অর্থাৎ সত্যকে সুন্দরভাবে তুলে ধরাই গল্প বলা। গল্প সম্পর্কে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভুল ধারণাগুলো হল, এটি শিশুদের খোরাক, গল্পের মধ্যে সত্য উপাদান থাকেনা ইত্যাদি। একবার চিন্তা করে দেখুন পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা গল্পগুলো কিন্তু সত্য ঘটনার উপর দাঁড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গল্প, সাত বীর শ্রেষ্ঠদের গল্প এগুলো কিন্তু আমাদের প্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যদি কাল্পনিক অথবা মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয় তবে সে গল্পের আয়ু বেশিদিন টিকবেনা এটা নির্মম সত্য। তেমনিভাবে সরকারি-বেসরকারি-সেচ্ছাসেবীসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেই মিথ্যা নির্ভর গল্প কখনই ইতিবাচক ফল আনতে পারেনা। এটা পরীক্ষিত।
খুব পরিচিত একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। আমরা জানি গল্প আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। কোনো কিছু কেনার সময় আমরা গল্প দেখেই কিনে থাকি। গত কয়েক দশকের বেশি সময় ধরে আমরা সুন্দরী মেয়েদের এটা বলে বিশ্বাস করাতে পেরেছি যে, তারা আসলে সুন্দরি না। তারা যদি ফেয়ার এন্ড লাভলি (পুরুষ সংস্করণও আছে) ব্যাবহার করে তবেই তারা সুন্দর। ফেয়ার এন্ড লাভলির বিজ্ঞাপন দেখে মেয়েরা বিশ্বাস করে এবং কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে তা কিনে থাকে। এটা হাসি বা তামাশার বিষয় না। এর মধ্যে রয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিজনেস। কেউ কিন্তু আমাদের মাথার কাছে বন্ধুক ধরে বলেনা তোমাকে ফেয়ার এন্ড লাভলি কিনতেই হবে। আমরা গল্পটা মিডিয়াতে দেখি, সুপার মার্কেটে যাই এবং নির্দিষ্ট সেলফ থেকে খুঁজে বের করি এবং কিনে থাকি। আমরা জানি তারপরেও কিনে থাকি কারণ আমরা আসলে গল্পটা কিনে থাকি।
ভাবছেন, মিথ্যা নির্ভর গল্প এতদিন তবে কীভাবে টিকে আছে? সত্যের জন্য আরেকটু অপেক্ষা করুন। সত্যের অপেক্ষা দীর্ঘ হলেও সত্যের জয় হবে এটাই সত্য। মনে রাখতে হবে, সব গল্পই সত্য ঘটনা থেকে আসে। যদি আপনি বানোয়াট, মিথ্যা বা কাল্পনিক কিছু দিয়ে গল্প তৈরি করেন দেখবেন সেই গল্প বেশিদিন টিকবেনা।