Image Alt

Blogs

How Stories are Changing the Game

“Whoever Tells the Best Story Wins” এটি একটি বিখ্যাত বইয়ের নাম। আমেরিকান লেখিকা Annette Simmons-এর লেখা বইয়ের শিরোনাম দেখে নিশ্চয় অনুমান করতে পারছেন স্টোরি বা গল্প কীভাবে আমাদের এগিয়ে রাখে। পরিবার থেকে শুরু করে রাজনীতি, ধর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে দেখবেন যারা লিডার তারা অন্যদের চাইতে ভালো গল্প বলতে পারেন। গল্প বলার মাধ্যমেই কিন্তু তারা অন্যদের যেকোনো কাজে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। তাই বিজ্ঞজনেরা  গল্পকে “গেইম চেঞ্জার” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। যিনিই ভালো গল্প বলতে পারবেন তিনিই জিতবেন। আপনার নিজের জীবনের অন্তত একটা ঘটনা মনে করতে পারেন যেখানে আপনি একটি বিষয় খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে অপ্রত্যাশিত ফলাফল এনেছেন। অবাক হচ্ছেন? বিষয়টি খুব স্বাভাবিক। চলুন দেখে আসি গল্পের কী এমন ক্ষমতা যার কারণে যিনি ভালো গল্প বলেন তিনি সবার চেয়ে এগিয়ে থাকেন।

Stories Help to Remember Stuffs: আপনাকে পাইথাগোরাস থিউরিটি ব্যাখ্যা করতে বলা হলো। আপনি কি পারবেন? আচ্ছা ঠিক আছে, পাইথাগরাস বাদ। আপনি কি এই মুহূর্তে আর্কিমিডিসের থিউরি বা নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ থিউরি ব্যাখ্যা করতে পারবেন? থিউরি-টিউরি বাদ। তিনদিন আগের সংবাদপত্রের শিরোনাম মনে আছে? অথবা পরশু দিনেরটা? এবার সহজ একটা বিষয়। কচ্ছপ আর খরগোশ, কাকের পানি খাওয়া এই ঘটনা দুটি কি আপনার মনে আছে? আমি জানই সবার মনে আছে। আপনি কি গত ১০ বছরে একবারের জন্য হলেও এটা এই গল্প দুটা পড়েননি বা  রিহার্সাল করেননি। তারপরেও মনে আছে! কীভাবে? কারণ আমরা গল্প মনে রাখতে পারি। আমাদের ব্রেইন এমনভাবে ডিজাইন করা যেখানে গল্প মনে থাকবেই। আর্কিমিডিসের থিউরি আমাদের মনে নাই কিন্তু আর্কিমিডিস চৌবাচ্চা থেকে কাপড়-চোপড় ছাড়াই রাস্তায় নেমে “ইউরেকা উইরেকা” বলে চিৎকার করেছিলেন সেটা কিন্তু ঠিকই মনে আছে। আবার নিউটনের সামনে গাছ থেকে আপেল পড়ার গল্প কিন্তু সবার মনে আছে। ডাটা, পরিসংখ্যান বা তত্ত্ব আমরা মনে রাখতে পারিনা কিন্তু গল্প ঠিকই মনে থাকে।

Stories Help Explain Critical and Complex Messages: খুব জটিল ও কঠিন বিষয়কে সহজ করে কারো সামনে তুলে ধরার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম গল্প। ধরা যাক, আপনি কাউকে একটা ম্যাসেজ দিলেন বা কিছু একটা বললেন কিন্তু আপনার সেই শ্রোতা যদি সেটা বুঝতে না পারে তবে এখানে কৃতিত্বের কিছু নাই। দুনিয়া বদলে দেয়ার মত একটা আইডিয়া আছে আপনার মাথায় কিন্তু আপনি বিনিয়োগকারীকে সেটা না বোঝাতে পারছেননা। কোনো লাভ নাই। আমরা ধরেই নেয় এটা শ্রোতার সমস্যা। তার মনোযোগ কম ইত্যাদি। অনেক সময় ভাবা হয় খুব কঠিন ও বিমূর্ত বিষয় সবার বোঝার কথা না। বিষয়টি আসলে এরকম না। বরং কঠিন বিষয়কে বোঝাতে গিয়ে কঠিন শব্দ ব্যবহারের কারণেই মানুষ বুঝতে পারেনা। অনেক বড় বড় কর্মকর্তা, লিডার আছেন যারা কঠিন কঠিন শব্দ বলে থাকেন। বিজনেসের ক্ষেত্রে এটা বেশি লক্ষ্য করা যায়। পরিভাষা ব্যবহার করে বক্তা বোঝাতে চান শ্রোতারা বুঝুক তিনি কত জ্ঞানী এবং অভিজ্ঞ! অনেক তরুণ মনে করেন সিম্পল শব্দ বললে হয়তো তাদের কথা বিশ্বাসযোগ্য হবেনা। কিন্তু এর ফলাফল বিপরীত হতে বাধ্য। তাই একটা কথা, বক্তব্য বা ম্যাসেজকে সরাসরি শ্রোতার কাছে তুলে ধরতে চাইলে গল্প হল শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।

Stories are Credible: ধরা যাক, আপনি দেশের সবচেয়ে বড় কোম্পানিতে চাকুরি করেন। কোনো এক কারণে কোম্পানি বড় ধরনের লসের সম্মুখীন হলো। অনেক জায়গা থেকে খরচ কমাতে হচ্ছে। দুধ চা-কফি বন্ধ। সবার জন্য  রং চা। অনেক কিছু আবার বাদ দিতেও হচ্ছে। স্বাভাবিক কারণেই কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। নানা রকম গুজব চারিদিকে। কাজে কারো মন নাই। সবাই হতাশ। আপনার ব্যক্তি জীবন ও পারিবারিক জীবনেও হতাশা। এমন সময় একদিন কোম্পানির এইচআর বিভাগ একটা মিটিং ডাকলো। নীতি নির্ধারকদের একজন সবার সামনে বললেন, “আমরা জানি আপনারা একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন, আতঙ্কের ভেতর দিন কাটছে আপনাদের। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অন্য একটা কোম্পানির সাথে খুব শীঘ্রই একীভূত হবার কাজ চলছে। আপনাদের ছাড়া আমরা কিছু চিন্তা করিনা। দয়া করে আপনারা কাজে মন দিন।” এটা একটা চিত্র।

আমরা আরেকটি চিত্র দেখতে পারি। সেই নীতি নির্ধারক এবার বললেন “আমি জানি আপনারা সবাই একধরনের আতঙ্কের মধ্যে আছেন। এটাই স্বাভাবিক। অনেকে ভাবছেন আপনাদের চাকুরি চলে যাবে। এতে আপনাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না। গত পরশু আমরা “নাইসটেক” এর সাথে সাথে মার্জারের বিষয়ে সর্বশেষ মিটিং করেছি। তাদের সাথে একটা চুক্তি হয়েছে। আগামী মাসের ১ তারিখ থেকে মার্জার শুরু হবে। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানকে আরও বড় করতে চাই। নতুন নতুন এলাকায় শাখা ওপেন করতে চাই। এ বিশাল কাজ আপনাদের ছাড়া কীভাবে হবে? তাই চিন্তার কারণ নাই। আপনারা আপনাদের কাজে মন দিন।”

এবার বলুন কোন ভার্সনটা বেশি বিশ্বাসযোগ্য হবে বলে আপনি মনে করেন?

Stories Inspire Actions:  আবেগ এমন একটি মানসিক অবস্থা যা স্বাভাবিক এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবেই উদ্ভূত হয় এবং একজন মানুষকে যেকোনো কাজ করতে অণুপ্রাণিত করে। ভালবাসা, আনন্দ, কষ্ট, রাগ, ভয়, ঘৃণা, বিস্ময় ইত্যাদি আবেগ একজন মানুষের আচরণকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। একটা সাধারণ তথ্য যেটা পারেনা। আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কীভাবে নিয়েছেন? এখানে ডাটা ছিল? আপনার ভালবাসার মানুষ নির্বাচনের সময় কোন বিষয়টি আপনাকে প্রভাবিত করেছে? তখন আপনি নিশ্চয় ডাটার উপর নির্ভর করেননি। ধরা যাক, আপনি একটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা অফিসার। সাম্প্রতিক সময়ে আপনার প্রতিষ্ঠানে ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ২ মাসে ৪ জন কর্মী মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন ১৫ জনের বেশি। আপনি চাইছেন নীতি নির্ধারকরা যেন বিষয়টি সিরিয়াসলি নেয় এবং দ্রুত বাজেট বরাদ্দ দেয়। এখানে আপনি দুটি কাজ করতে পারেন। প্রথমটি হল, দুর্ঘটনার একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরতে পারেন এবং বলতে পারেন এ জন্য ২ কোটি টাকার বাজেট দরকার। এক্ষেত্রে নীতি নির্ধারক যেটা বলবেন সেটা হলো, “পরের মিটিংয়ে আবার উপস্থাপন করেন।” পরের মিটিং কিন্তু তিন মাস পর। আপনি আরেকটি কাজ করতে পারেন। সেটি হল পরিসংখ্যান সংগ্রহ করার পাশাপাশি দুর্ঘটনা কবলিত ২ টি পরিবারের মর্মান্তিক গল্প ছবিসহ তুলে ধরতে পারেন। এরপর পরিসংখ্যান দিয়ে বাজেট পেশ করতে পারেন। আপনার নীতি নির্ধারকগণ কোনো সময় ক্ষেপণ না করেই আপনাকে অনুমোদন দিবে। এখানে কিন্তু এমন কিছু বলা হয়নি যেটা মিথ্যা বা কাউকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। এখানে শুধু আসল চিত্রটি আবেগ দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর প্রথমটিতে আপনার ম্যাসেজ বেশিরভাগ মানুষের ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং জোন পর্যন্ত গিয়ে আটকে গেছে।

গল্পের আরেকটি শক্তির জায়গা হচ্ছে গল্প খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কোনো রকম মাধ্যম ছাড়াই শুধু মানুষের মুখে মুখে খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি গল্প ছড়িয়ে পড়ে। একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ধরা যাক আপনি যে অফিসে কাজ করেন সেখানে একজন নতুন সিইও এসেছেন। বেশিরভাগ কর্মী সরাসরি একজন সিইও’র কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাননা। আপনার ক্ষেত্রেও তাই। আগের সিইও ভীষণ গুরু গম্ভীর এবং কড়া ছিলেন। তিনি অফিস বিল্ডিং এর কাছাকাছি এসেছেন শুনলেই লিফট ম্যান দুটো লিফটের একটা শধু তাঁর জন্য ফিক্সড করে রাখতেন। তিনি তাঁর কক্ষে ঢোকার পরে লিফটটি অন্যদের জন্য খুলে দেয়া হতো। বিষয়টি নিয়ে সবাই খুব বিরক্ত। কিন্তু এটা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা সম্ভব না এটা সবার জানা। মজার বিষয় হচ্ছে নতুন সিইও লিফট ব্যবহার করেন না। তিনি সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে উঠেন এবং প্রত্যেক ফ্লোরে এক মিনিটের জন্য দাঁড়িয়ে সবাইকে শুভ সকাল বলে তারপর নিজের কক্ষে প্রবেশ করেন। কী দারুণ গল্প! এই গল্পটি মাত্র ২ দিনের মধ্যে সারাদেশে  আপনার কোম্পানির যত কর্মী আছেন তাদের কাছে ছড়িয়ে পড়ল। এভাবেই কিন্তু পরিবর্তন আসে। যারা গল্প বলেন এবং আপনার নতুন সিইও এর মত গল্প তৈরি করেন তারাই কিন্তু এগিয়ে থাকেন।