Image Alt

Blogs

Leveraging the Power of Stories in Business

গল্প বলাটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আমাদের প্রতিদিনের যোগাযোগের প্রায় ৬৫ শতাংশ আমরা গল্প বলে থাকি । তবে গল্পকে শুধু বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করলে গল্পের অসীম শক্তিকে অস্বীকার করা হবে। বিনোদন মূল্যের বাইরেও গল্পের একটা বড় অর্থ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, গল্প বলতে পারা একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক দক্ষতা। কার্যকরভাবে এ দক্ষতা প্রয়োগ করতে পারলে ব্যবসার ক্ষেত্রে দারুণ সফলতা অর্জন কড়া সম্ভব। গল্পের মাধমে ক্রেতার আনুগত্য লাভ, একটি শক্তিশালী বিপণন কৌশল তৈরি, মুনাফা বৃদ্ধি এবং আরও অনেক কিছু করা সম্ভব।

আমরা মনে করি বিজনেস মানেই নাম্বার, ডাটা, তথ্য ইত্যাদি। কথা সত্য। কিন্তু মানুষ এসব নাম্বার, ফ্যাক্ট, ফিগার মনে রাখতে পারেনা বা মনে রাখেনা। আমরা একদিন আগের পত্রিকার সংবাদ শিরোনাম মনে রাখতে পারিনা। তাছাড়া তথ্য উপাত্ত আমাদের প্রভাবিত করতে পারেনা। একজন বিজনেস লিডার, একজন সিইও, একজন উদ্ভাবককে গল্প বলতেই হয়। তাদের স্বপ্নের গল্প বলতে হয়। গল্প কীভাবে আপনার ব্যবসা-বাণিজ্যকে সাহায্য করে সেটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

Business Development

যেকোনো ব্যবসা ধারণার পেছনে একটা গল্প থাকে। নতুন পণ্য বা সেবা নিয়ে আসা কিম্বা ব্যবসা বড় করার পেছনে একটা গল্প থাকে। এই গল্পটি আপনি আপনার মত করে বলুন। গল্পটি বলা হলে আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মী, গ্রাহক, স্টেকহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীরা কনটেক্সটটি বুঝতে পারবেন। কর্মীরা প্যাশন দিয়ে কাজ করবে, ক্রেতারা আপনার পণ্য বা সেবা গ্রহণ করবেন এবং বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবেন। এক কথায় তারা আপনাকে গুরুত্ব দিবেন।

আপনার ব্যবসা ধারণাটি ঠিক কোন সমস্যার সমাধানের জন্য তৈরি, এ সমস্যাটি কীভাবে আপনাকে ভুগিয়েছে এবং কীভাবে  আপনি সমস্যাটির সমাধান করতে এগিয়ে আসলেন সে গল্পটি আপনাকে বলতে হবে। গল্পটি আপনাকে এমনভাবে বলতে হবে যেন আপনার গ্রাহকরা তাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে এটি খুব সহজে রিলেট করতে পারে। আরেকটি বিষয়, এই পণ্য আপনার জীবনে কী ভ্যালু এ্যাড করেছে এবং অন্য মানুষের ক্ষেত্রে কী করতে পারে সেটিও বলতে হবে।

এভাবে গল্প বলা হলে একজন ক্রেতা আপনাকে বিশ্বাস করবে, আপনার সাথে এক ধরনের সংযোগ স্থাপন করবে এবং আপনার ব্র্যান্ডকে গ্রহণ করবে। একজন ক্রেতা আগে আপনাকে বিশ্বাস করতে চায় তারপর আপনার পণ্য, সেবা বা ব্র্যান্ড। গল্পের মাধ্যমেই একটা মানবিক সম্পর্ক তৈরি হয় দুই পক্ষের মধ্যে। ব্যক্তিগত গল্প বলা হলে এটা ক্রেতাদের খুব সহজে মনে থাকে এবং নিজেদের সেই গল্পের নায়ক বা গল্পের চরিত্র ভাবতে থাকে। আবেগ নির্ভর যোগাযোগের কারণেই সম্পর্কটা মজবুত হয়।

Marketing and advertising

স্টোরিলেটিং একটি শক্তিশালী বিপণন কৌশল তৈরি করতে পারে। সাধারণ ক্রেতা ব্র্যান্ড এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের  সাথে সংযোগ স্থাপন করতে চায়। তাই প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার আবেগ উদ্রেককারি এবং মানুষের জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠ বিষয় নিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করে থাকে। বিজ্ঞাপনে যৌন আবেদন ব্যবহার করার দিন শেষ। একটি ভাল ব্র্যান্ডের প্রচারণা বা বিজ্ঞাপন স্বচ্ছ হওয়া উচিত। আজকের যুগে আপনি আপনার ব্যবসায়িক লড়াইয়ে গ্রাহকদের কীভাবে আকৃষ্ট করছেন সেটা তারা বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করে। তাই বিষয়গুলো সব মাধ্যমের জন্য সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া জরুরি।

Increases efficiency and engagement

কর্মীরা হল যেকোনো ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ বা সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। একটি ব্যবসা তখনি সফল হয় যখন তার কর্মীরা ঠিকমত কাজ করে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা নানা কারণে নিষ্ক্রিয় থাকে। গ্যালাপের গবেষণা মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ শতাংশ কর্মী এঙ্গেইজড না অথবা ডিস এঙ্গেইজড। গল্প বলার মাধ্যমে অফিসে একটা দারুণ কাজের পরিবেশ গড়ে তোলা যেতে পারে। গল্প বলার মাধ্যমে ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে তোলা যেতে পারে। প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস, সংগ্রাম ইত্যাদি না বলে ভিসন স্টোরি বলা যেতে পারে। তাদের জন্য যেটা জরুরি বা গুরুত্বপূর্ণ সেটি শেয়ার করলে তারা অনুপ্রাণিত হবে এবং কাজ করার প্রেরণা বৃদ্ধি পাবে।

Decision-making

মানুষ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এর পেছনের গল্প সন্ধান করে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন কোনো পণ্য কেনার বিষয়ে  চিন্তা করেন আপনি অনলাইন বা অফলাইন রিভিউগুলো খুঁজে থাকেন। এ রিভিউগুলো মূলত গল্প। শুধু মাত্র ফিচার বা তথ্য উপাত্ত দেখে মানুষ কিছু কেনার সিদ্ধান্ত নেয়না। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। একজন মানুষ যখন একটি ব্যাবসার সাথে যুক্ত হতে যায় তখন সে এ ব্যবসার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে থাকে। আর এজন্য তাকে গল্পের উপর নির্ভর করতে হয়। প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে একটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সেটি হলো, “আমি বা আমরা কেন আপনার কাছে যাবো বা আপনার পণ্য কিনবো”। গ্রাহক, কর্মচারী বা বিনিয়োগকারী সবার জন্যই এটি প্রযোজ্য।

Humanising a brand and increasing profit

মানুষ সেই প্রতিষ্ঠানের পণ্য কিনতে চায়, যাদের তারা ক্রেতাদের প্রতি যত্নবান বলে মনে করে। এটি বিশ্বব্যাপী সমানুভূতি সূচকে (ইম্প্যাথি ইনডেক্স)-২০১৫- এ দেখা গেছে তালিকার শীর্ষ থাকা দশটি সংস্থা তালিকার নিচে থাকা ১০ টি সংস্থার চেয়ে দ্বিগুণ আয় করেছে এবং দ্বিগুণ ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়িয়েছে। তাই গল্প বলার মাধ্যমে আপনি আপনার কোম্পানির সংবেদনশীল চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে পারেন এবং সফল হতে পারেন। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে ক্রেতারা ব্র্যান্ডের সাথে সরাসরি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে এবং তাদের চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতিগুলি ভাগ করে নিতে পারে। মনে হয় ব্র্যান্ডটি একজন ব্যক্তি। একটি ভাল গল্প বলার মাধ্যমে আপনার কোম্পানির মানবিক তুলে ধরুন। এমন একটি মুখ লুকিয়ে থাকা সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলে গ্রাহকের সাথে আপনার কোনো সম্পর্কই তৈরি হবেনা।

Transfer values and beliefs on to your audience

আপনার ক্রেতারা যখন আপনার গল্পগুলির সাথে সংযুক্ত হয়ে পড়ে তখন আপনি আপনার ভ্যালু, বিশ্বাস ইত্যাদি বিষয় শেয়ার করতে পারেন। কোন বিশ্বাসে বা চিন্তা থেকে আপনি এই কাজটি করেছেন সেটি শেয়ার করলে মানুষ আপনাকে আরও কাছের মনে করবে। বেশিরভাগ কোম্পানি অনেক চেষ্টা করেও একটি এর ভ্যালুগুলো কর্মীদের বোঝাতে পারেনা। মিটিং, পাওয়ার পয়েন্ট, রিপোর্ট, চিঠি, মেইল তেমন কিছু করতে পারেনি। আপনি যদি একটা যুতসই গল্প আপনার কর্মীদের সাথে শেয়ার করতে পারেন তবে দেখবেন সব সহজ হয়ে গেছে।

Emotionally connect people and create loyalty

সেরা গল্পগুলি ক্রেতার মনে এক ধরনের সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করে। ক্রেতা তখন সত্যই এই গল্পগুলির সাথে সংযুক্ত হয় এবং তারা আপনার প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বাস করে। মানুষ যখন কোনও গল্প শোনেন, তখন তারা গল্পটির নায়ক যেটা ফিল করে দর্শকরাও সেটা ফিল করে। এই সুযোগে আপনি আপনার কোম্পানির ভুল, ব্যর্থতা, খারাপ সময় ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরতে পারেন। এরফলে কোম্পানি সম্পর্কে সাধারণ মানুষ বেশি জানতে পারবে এবং বেশি কাছে আসতে পারবে। মানুষ যুক্তির চেয়ে আবেগের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। গল্প হচ্ছে মানুষের সংবেদনশীলতা উস্কে দেয়ার একটা দারুণ মাধ্যম। আপনার বিজনেস কৌশলেও এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

আজকের দিনে এমন একটা সাক্সেফুল ব্র্যান্ড পাওয়া যাবেনা যার পেছনে গল্প নাই। গল্পগুলি মানুষের কাছে অর্থ সরবরাহ করে, প্রসঙ্গ তৈরি করে এবং উদ্দেশ্যকে পরিষ্কার করে থাকে। তাই তথ্য-উপাত্তের চেয়ে গল্প মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়। আর সেই কারণেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন গল্প বলার দিকে মনযোগী হচ্ছে।